Bengali Poems

Read Bengali poems & short stories by Rina Ghosh. Please feel free to comment on the posts.

লিপিকার দিনলিপি ৩



২০ শে আগস্ট 

         কাল রাত্রে যখন ফোন করলাম শিরিণকে গলা শুনে মনে হচ্ছিল বেশ কান্নাকাটি করেছে । তাহলে এখন কথাটা বলতে পারি , কাঁদলে মন হাল্কা হয়ে যায় । ধাক্কাটা নিতে পারবে । ধীরে ধীরে রমেন মিত্রর সঙ্গের কথোপকথন সব জানালাম ।

           “ঠিক আছে , ভাল হল জানতে পারলাম”, দীর্ঘশ্বাস টা লুকল শিরিণ । তার মানে উত্তরটা নেগেটিভই’ । 

         “তা কেন এখন থেকে ধরে নিচ্ছিস , পজিটিভ ও তো হতে পারে” আমি একটু আশা যোগালাম , একেবারে হঠাৎ করে মনটা ভেঙ্গে দিতে চাইলাম না , “ বলল ত দাদার সঙ্গে কথা বলতে যাবে এই উইকে । দেখা যাক না কি বলে ?”

            “যাই বলনা লিপিকা , উনার কিন্তু আমাকে দ্বিতীয়বার ফোন করা উচিত হয়নি” শিরিণের গলায় অভিমান ।

            “সে তো একশবার ! দাড়া না ,সোমবার কি জবাব দেয় দেখি, যদি নেগেটিভ কিছু বলে আমিও ছাড়বনা , অবশ্যই এই কথাটা জিজ্ঞাসা করব , ‘তাহলে কেন ওকে ফোন করে ও কেমন আছে জানতে চেয়েছিলেন ?”

               “হ্যাঁ , এই কথাটা বলবি যে একজনের মনে আশা জাগিয়ে এভাবে ফোন করা মানে তাকে অপমান করা । উনি তো আরও অনেক পাত্রীকে দেখতে যাবেন বলে দিস এরকম ব্যাবহার তাদের সঙ্গে যেন না করেন”, এবার শিরিনের গলায় রাগ ঝরে পড়ল ।

           “তা আর বলতে ! একেবারে তুলোধূনো করে ছাড়ব ব্যাটাকে ! আমার বন্ধুর মনে কষ্ট দেওয়া” !! হাসাতে চাইলাম ওকে । সফল হলাম । একেবারে হা হা করে হেসে উঠল , “ হ্যাঁ , বাছাধন জানেনা তো যে কার পাল্লায় পড়েছে !”  এবার আমিও বেশ মন খুলে হাসলাম । শিরিণের মুখে হাসি আনতে পেরেছি এটা আমাকে খুব আনন্দ দিল । 

                    আমার মনে এখন একটা কথা বারবার উঁকি দিচ্ছে , শিরিণকে এই ব্যাপারটার মধ্যে টেনে এনে ভুল করলাম না তো ? বেশ তো ছিল একা একা , নিজের জীবনটাকে মোটামুটি পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে সময় কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছিল । আমি আবার ওকে স্বপ্ন দেখালাম , ওর চোখে আশার কাজল পরালাম , এই স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবেনা তো ? এই কাজল চোখের জলে মুছে জাবেনা তো ?  হে ভগবান ! তা যেন না হয় । আমি আর তাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবনা কোনদিন । 

                  সেই দিনটা আজও মনে আছে । সকালে শিরিণের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল ,   ও বলল আগের দিন রাত্রে হঠাৎ প্রচণ্ড মাথা ঘোরা শুরু হয়েছিল, বিছানা থেকে কিছুতেই উঠতে পারছিলনা অথচ বাথরুমে যেতেই হবে । কোনরকমে দেয়াল ধরে ধরে বাথরুমে যায় তারপর অনেকক্ষন শাওয়ার চালিয়ে তার নিচে দাঁড়িয়েছিল । একটু ঠিক লাগার পর ওই ভেজা জামাকাপড় পরা অবস্থাতেই বিছানায় এসে শুয়ে পরে । ওঠার শক্তিটুকু পর্যন্ত্য ছিলনা । ভোরে উঠে কোনরকমে একটা অ্যানটাসিড খেয়ে আবার শুয়েছে । অত রাতে কাউকে ডাকতেও সাহস পাচ্ছিল না ।

                  এই কথাটা শোনার পর থেকেই আমার মনে একটা অস্বস্তি হতে শুরু করেছিল । সারাদিন শুধু ওর কথা ভেবেছি, আহারে ! একটা মেয়ে কি অসহায় হয়ে জীবন কাটাচ্ছে ! মা নেই, বাবা নেই,ভাই বোন কেউ নেই ! শুধু কোচিং সেন্টারে আর ঘরে ছাত্র পড়িয়ে নিজের সংসার নিজে চালাচ্ছে । বাবা সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট অফিসে কাজ করতেন বলে  অবিবাহিত মেয়ে হিসেবে বাবার পেনশনটা পায় ও । এটা একটা বিরাট সিকিউরিটি , অন্ততঃ বাড়িভাড়া , ইলেক্ট্রিসিটির বিল ,মাসের চাল ডাল এগুলো তো হয়ে যায় , টুইশনি তো কোন ঠিক নেই কোন মাসে কম কোন মাসে বেশী ।

               এরকম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে দেখবে কে ওকে ? নিজেকে ওর জায়গায় রেখে দেখতে গিয়ে শিউরে উঠলাম । ভীষণ একটা কষ্ট হচ্ছিল । মনে হল ওর যদি একটা বিয়ে দিতে পারতাম খুব ভাল হত , কিন্তু ও কি রাজী হবে ? ৫০ পেরিয়ে গেছে, এই বয়সে আমার বলাটাই কি উচিত হবে ? পাত্রই বা কোথা থেকে যোগাড় করব ? এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ে গেল সন্তুদার কথা ।

              আরে হ্যাঁ  , সন্তুদাই তো এখনও বিয়ে করেনি , আমরা আগে খুব পেছনে লেগে থাকতাম বিয়ে করো বিয়ে করো  বলে, তারপর ছেড়ে দিয়েছি , সন্তুদা আমাদের থেকে ৩/৪   বছরের বড় । আমার মাসতুতো বোন টিনার দ্যাওর । টিনার বিয়ে আমাদের পাড়াতেই হয়েছিল । সন্তুদাকে আমরা ছোটবেলা থেকেই চিনি । অবস্থা বেশ ভালো , পার্ক স্ট্রীটে নিজের ওষুধের দোকান আছে । যাদবপুরে নিজেদের ফ্ল্যাট , সঙ্গে শুধু ওর মা মানে রুনুপিসি থাকে । 

              এই তো বেশ ভাল জুটি হবে মনে হচ্ছে । কিন্তু তার আগে শিরিণকে রাজী করাতে হবে । তাই ফোন করলাম ।

0 comments:

Post a Comment