Bengali Poems

Read Bengali poems & short stories by Rina Ghosh. Please feel free to comment on the posts.

চা -এ গরম !



চায়ের নেশা আমার নেই কস্মিনকালে ছিলও না                                                   
 ছোটবেলায় আমরা জানতাম চা খায় শুধু বড়রা , ছোটদের জন্য হরলিক্স যখন বড় হব তখন চা খেতে পারবো
যখন আর একটু বড় হলাম চায়ের প্রতি উৎসুকতা জাগল , জিনিসটা খেতে কেমন রে বাপু ? মায়ের কাছে সরাসরি চাইবার সাহস ছিলোনা তাই লুকিয়ে লুকিয়ে কারও ছেড়ে যাওয়া চায়ের কাপের তলানি থেকেই চুমুক দিয়ে পরীক্ষা করতাম
 একে তলানি তায় ঠাণ্ডা , জিভে একটা কুটকুটে বিস্বাদ অনুভব করতাম ভেবেছি ছ্যাঃ ছ্যাঃ ! এর নাম চা ? আর এই পানীয় না খাবার জন্য এত বাধা নিষেধ ? খাওগে তোমরা হুশহুশিয়ে ! আমাদের এই মিষ্টিতে ভরা হরলিক্স ই ভাল !   
চায়ের নেশা না হবার আর একটা পোক্ত কারণ ও আছে আমাদের বলা হয়েছিলো চা খেলে নাকি গায়ের রঙ কালো হয়ে যায়
উদাহরণস্বরূপ দেখানো হত আমার মেজপিশি, ছোট পিশিকে, উনাদের  গায়ের রঙ শ্যামলা ছিল  আর তাঁরা খুব চা খেতেন, ওদিকে  বড়পিশি আর আমার মা দিনে একবার শুধু চা  খেতেন তাই  নাকি তাঁরা এত ফর্শা
 সৌন্দর্য বিচারের মাপদন্ডে গায়ের রঙের যে কতটা গুরুত্ব সেটা  ওই বয়সেই বোধ করি আন্দাজ করতে পেরেছিলাম তাই চায়ের নেশাটাকে খুব সাবধানের সঙ্গে এড়িয়ে চলতাম ।
বিপদ হল বিয়ের পর । আমার স্বামী চায়ের একেবারে পোকা !
 দিনে কতবার যে চা খেত ! ওঃ ! প্রথম প্রথম তো উৎসাহের সঙ্গে বারবার বানিয়ে দিতাম নতুন বউ হবার আতিশায্যে !
 কিন্তু ছেলেমেয়ের মা হবার পর সেই উৎসাহে ভাঁটা পড়তে থাকলো । যেহেতু নিজের চায়ের নেশা নেই তাই টাইমে টাইমে চা দিতে দেরী করতাম । কখনো ইচ্ছেয় কখনো বা অনিচ্ছেয় । আর এ নিয়ে চলত তুমুল অশান্তি ! হা হা হা ! উনি নিজে চা বানাতে পারতেন না তাই আরও অশান্তি ছিল ।
সে সব বিপদের দিন গেছে , আমার পাল্লায় পড়ে চায়ের নেশা তাঁর ঘুচেছে !
 দিনে এখন শুধু তিন কাপ । তাও সেটা চিনি ছাড়া লিকার চা ।
 আর সবচেয়ে খুশীর খবর যে এখন তিনি সেটা বানাতে শিখে গেছেন , মাঝে মাঝেই নিজে বানিয়ে নেন আর আমাকেও দেন !
পায়ের ওপর পা তুলে দিয়ে সোফার ওপর বসে টি ভি দেখতে দেখতে সেই চা খেতে যে কি ভাল লাগে আহা তোমাদের যে কি করে বোঝাই !!

0 comments:

Post a Comment