Bengali Poems

Read Bengali poems & short stories by Rina Ghosh. Please feel free to comment on the posts.

বসন্তের বিষণ্ণ বিকেল




              বিকেল তো রোজই আসে । কিন্তু নিঃসঙ্গ বিকেল ? আর সে যদি হয়  বসন্তের বিকেল ?  সবার অনুভূতিতেই তো এইরকম একটা বিকেলের স্মৃতি মনের কোণায় পদচিহ্ন রেখে যায় ।

              এই রকম বিকেল  আমায় শুধু বিষণ্ণই করেনা একটা চাপা হাহাকার  বুকের  ভেতরটা ছিন্নভিন্ন করে দেয়
  
               সেই বসন্তের বিকেলে ফাগুনের হাওয়া ছিল , আসন্ন দোলের রঙ্গিন প্রস্তুতি ছিল , আকাশের রঙ লাল ছিল কিন্তু সে রঙ রাঙা পলাশের ছিল না ।

                আমি তখন ক্লাস ফাইভ কি সিক্সে পড়ি । আমাদের বাড়ীর উঠোন টা বেশ বড় হওয়াতে আশেপাশের সমবয়সী বন্ধুরা সব বিকেলে ওখানেই চলে আসতো আর আমরা চু কিৎ কিৎ থেকে শুরু করে এলাটিং বেলাটিং সই লো  , ধাপ্পা , লুকোচুরি, কানামাছি ভোঁ ভোঁ সব খেলা ওখানেই  খেলতাম ।


               বাড়ীর কাছে ছিল কলেজ স্কোয়ার । শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে মেলা হয়েছিল ওখানে , প্রত্যেক বছরই হত । সেবার শিবরাত্রি শেষ হবার  পর ও মেলা ভাঙ্গেনি , আমাদের প্রধান আকর্ষণ ছিল হাতে টানা চার বাক্সের নাগরদোলা । সুযোগ পেলেই চড়তে চলে যেতাম ।

               সেদিন বিকেলে ও যথারীতি বন্ধুরা সব এসে হাজির আমাদের সেই উঠোনেকিন্তু খেলার বদলে নাগরদোলা চড়ার প্ল্যান হল । পরের  দিনই মেলা ভেঙ্গে যাচ্ছে সুতরাং আজই মজা করার শেষ দিন ।

                কিন্তু আমার বাড়ি থেকে অনুমতি পাওয়া গেলনা ।  বাকি সব বন্ধুরা হই হই করতে করতে আমার চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেল, আমি বাড়ীর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ফ্রক দিয়ে চোখের জল মুছছি আর শূন্য দৃষ্টিতে রাস্তার লোকজন দেখছি ।

                আমি ছাড়া বাকি সব্বাইকে সুখী ভাবতে থাকছি কেননা আমি বন্ধুদের সঙ্গে নাগরদোলা চড়তে যেতে পারিনি ,আমায় যেতে দেয়নি । আমার মত দুঃখী আর কেউ নেই । 

             এরা সব কত স্বাধীন কত সুখী ! রাস্তার কলে জল নিতে আসা  বৌটি  , গামছা পরে কলের তলায় স্নান করতে বসা ছেলেটা , কয়লার দোকানে কেরোসিন তেল দিতে আসার ট্যাংকারের লোকটা , ট্যাংকারের ওপর বসে থাকা কয়লাওয়ালার বাচ্চা ছেলেটা ,রিক্সা নিয়ে অপেক্ষা করা রিকশাওয়ালা , মুদির দোকানে পেঁয়াজ কিনতে আসা পাশের গলির শীলাদি মায় দোকানের সামনে কয়লার উনুনে উবু হয়ে বসে রুটি বানানো  হিন্দুস্থানি মুদিওয়ালার বৃদ্ধা মা পর্যন্ত আমার চেয়ে সুখী বলে মনে হচ্ছিল ।

               বসন্তের সেই উজ্জ্বল বিকেলবেলাটা শুধু আমাকেই  বিষণ্ণতার  কালো চাদরে ঢেকে দিয়ে অন্য সবার কাছে চলে গেছিল ।

              সন্ধ্যে ৬টার শো এ পিসিরা সিনেমা যাবে বলে রেডি হচ্ছিল ।

         ভেতর থেকে আমায় ডাকল , মিঠু আয় তো কুঁচি টা ধরে দে !

             মুখ ব্যাজার করে ঘরে ঢুকলাম । রাগ দেখিয়ে ধপধপ করে মাটিতে পা ফেলে  পিসির সামনে এসে মেঝেতে বসে পড়লাম ।

            কুঁচিতে হাত দিতে যাবো হঠাৎ দাআআম করে একটা কানফাটানো আওয়াজ !

            একেবারে চমকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি জানালার সামনে  চকমকে হলুদ লাল আলো  ! খুব জোরে হেলছে দুলছে ! সঙ্গে একটা হা হা করা শব্দ !

             কানের কাছে মা পিসি যখন চিৎকার করে উঠল “আগুন ! আগুন !” তখন উপলব্ধি করতে পারলাম এটা আগুন ।

               যে কেরোসিন তেলের ট্যাংকারটা পাশের কয়লার দোকানে কেরোসিন তেল দিতে এসেছিল , যার ওপরে বসে কয়লাওয়ালার ছোট্ট ছেলেটাকে খেলা করতে এক্ষুনি দেখে এসেছি সেই ট্যাংকারটা ফেটে গেছে । মুহূর্তের মধ্যে তেল ছড়িয়ে  বিশাল আগুন পুরো এলাকাটাকে নিজের গ্রাসে নিয়ে ফেলেছে  

              রাস্তার একেবারে পাশেই আমাদের ঘরের দুটো বড় জানালা ।  সেগুলো খোলাই  ছিল । হতবাক হয়ে দেখছি কি ভয়ঙ্কর সে আগুনের আলো ! আগ্রাসী খিদে নিয়ে তার লেলিহান শিখা চলে আসতে চাইছে ঘরের ভেতরে ।

               মা দৌড়ে গিয়ে খাটের পাশের জানালাটা বাইরে হাত বাড়িয়ে টেনে বন্ধ করল । জানালার দু সেট পাল্লা ছিল ।  বাইরেরটা কাঠের আর ভেতরেরটা কাঁচের । মায়ের হাতে ফোস্কা পড়ে গেল ।

               মা পিসি হই হই করে সামনের ঘর থেকে বালিশ , বিছানা , চাদর শাড়ি জামা সব নিয়ে পেছনের দিকের ঘরে নিয়ে ফেলছিল । আমি তখনো এক জায়গায় হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি । কে একজন বলল, কিরে জিনিসগুলো সরা !শো কেসের ওপর ছোট একটা রেডিও রাখা ছিল । আমি ওটা তুলে নিয়ে দে দৌড় !

             আমার মা খুব সাহসী ছিল ,হাতে ফোস্কা হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও মেন গেট খুলে অন্যান্য কাকুদের সঙ্গে ট্যাঙ্ক থেকে বালতি বালতি জল আগুনের দিকে ঢালছিল ।

           আমাদের কারো বুদ্ধি কাজ করছিল না । আমার এক পিসি তো ঘর থেকে বালিশ কম্বল সব নিয়ে এসে জলে ভরা সেই উঠোনের ওপর ফেলে দিয়ে ওগুলোর ওপরেই বসে পড়ল ।

          আর এক পিসি আমাদের চার ভাইবোনকে পিছনের ঘরের এক বিশাল পালঙ্কের তলায় ঢুকিয়ে বসিয়ে দিয়ে গেল, একদম এখান থেকে না বেরোনোর কড়া আদেশ দিয়ে ।

            চারিদিকে হই হট্টগোল আর আমরা বিভ্রান্ত , আতঙ্কিত হয়ে চারজন চারজনকে জড়িয়ে  ধরে বসে আছি ।

            কতক্ষন ধরে সে অগ্নির তাণ্ডব চলল জানিনা । গর্ত থেকে বিড়ালের বাচ্ছা টেনে বের করার মত আমাদেরও  একসময় পালঙ্কের নীচ থেকে যখন টেনে বের করা হল তখনও আমরা কাঁপছি ।

           পরে জানতে পেরেছি আমার ধারণায়  যে সব সুখী মানুষগুলো  জীবন্ত হয়ে চলাফেরা করছিল , যাদের আমি ঈর্ষার দৃষ্টিতে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম এরা সবাই আমার থেকে বেশি সুখী ,তারা সবাই সেই বিধ্বংসী আগুনের শিকার হয়েছে ।

            দমকলের লোকেরা আগুন নেভাবার পর তাদের পোড়া  দোমড়ানো , মোচড়ানো , কালো শব দেখে সবাই শিউড়ে উঠেছে ।

            রাস্তার কল থেকে জল  নিতে আসা সেই  বউ জল নিয়ে আর ঘরে ফেরেনি , “মেরে আঙ্গনে মে” গান করতে থাকা  ছেলেটার স্নান আর  শেষ হয়নি, কয়লাওয়ালার ছোট্ট ছেলেটার নাম আর স্কুলের খাতায় লেখা হয়নি, বিহারী সেই রিক্সাওয়ালাকে রাতেরবেলায় আর ছাতু মাখা খেতে হয়নি আর মুদিওয়ালার সেই বৃদ্ধা মাকে আর কোনদিন রুটি সেঁকতে হয়নি ।

         সেদিন রাতের আকাশ বাতাস গুমরে কেঁদে মরছিল যখন কয়েকদিন পর মাধ্যমিক দেবার কথা ছিল  যার সেই শিলাদির বিধবা মা  মেয়ের পা থেকে খুলে যাওয়া এক পাটি চটি কে  বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলছিল , ওরে মা রে ! কেন রে তোকে আমি মুদির দোকানে পাঠালাম ! তুই তো যেতে চাইছিলিনা ! তোকে  কত কি শোনালাম ! তুই রাগ করে কিনতে এলি ! আমি এ কি করলাম ! ফিরে আয় ফিরে আয় মা ! আমার যে আর কেউ নেই রে সোনা  !

         সেই কান্না , সেই হাহাকার সেই এক লহমায় চারপাশ ওলট পালট হয়ে যাওয়া এখনও আমার স্নায়ু কে নিপীড়ন করে ।

         এখনও কোন বসন্তের  বিকেলে একাকী থাকলে শিউড়ে উঠি । ত্বরিতে একবার চারিপাশে চোখ বুলিয়ে নিই । আশেপাশে কোন সুখী মানুষ নেই তো ?
  


চা -এ গরম !



চায়ের নেশা আমার নেই কস্মিনকালে ছিলও না                                                   
 ছোটবেলায় আমরা জানতাম চা খায় শুধু বড়রা , ছোটদের জন্য হরলিক্স যখন বড় হব তখন চা খেতে পারবো
যখন আর একটু বড় হলাম চায়ের প্রতি উৎসুকতা জাগল , জিনিসটা খেতে কেমন রে বাপু ? মায়ের কাছে সরাসরি চাইবার সাহস ছিলোনা তাই লুকিয়ে লুকিয়ে কারও ছেড়ে যাওয়া চায়ের কাপের তলানি থেকেই চুমুক দিয়ে পরীক্ষা করতাম
 একে তলানি তায় ঠাণ্ডা , জিভে একটা কুটকুটে বিস্বাদ অনুভব করতাম ভেবেছি ছ্যাঃ ছ্যাঃ ! এর নাম চা ? আর এই পানীয় না খাবার জন্য এত বাধা নিষেধ ? খাওগে তোমরা হুশহুশিয়ে ! আমাদের এই মিষ্টিতে ভরা হরলিক্স ই ভাল !   
চায়ের নেশা না হবার আর একটা পোক্ত কারণ ও আছে আমাদের বলা হয়েছিলো চা খেলে নাকি গায়ের রঙ কালো হয়ে যায়
উদাহরণস্বরূপ দেখানো হত আমার মেজপিশি, ছোট পিশিকে, উনাদের  গায়ের রঙ শ্যামলা ছিল  আর তাঁরা খুব চা খেতেন, ওদিকে  বড়পিশি আর আমার মা দিনে একবার শুধু চা  খেতেন তাই  নাকি তাঁরা এত ফর্শা
 সৌন্দর্য বিচারের মাপদন্ডে গায়ের রঙের যে কতটা গুরুত্ব সেটা  ওই বয়সেই বোধ করি আন্দাজ করতে পেরেছিলাম তাই চায়ের নেশাটাকে খুব সাবধানের সঙ্গে এড়িয়ে চলতাম ।
বিপদ হল বিয়ের পর । আমার স্বামী চায়ের একেবারে পোকা !
 দিনে কতবার যে চা খেত ! ওঃ ! প্রথম প্রথম তো উৎসাহের সঙ্গে বারবার বানিয়ে দিতাম নতুন বউ হবার আতিশায্যে !
 কিন্তু ছেলেমেয়ের মা হবার পর সেই উৎসাহে ভাঁটা পড়তে থাকলো । যেহেতু নিজের চায়ের নেশা নেই তাই টাইমে টাইমে চা দিতে দেরী করতাম । কখনো ইচ্ছেয় কখনো বা অনিচ্ছেয় । আর এ নিয়ে চলত তুমুল অশান্তি ! হা হা হা ! উনি নিজে চা বানাতে পারতেন না তাই আরও অশান্তি ছিল ।
সে সব বিপদের দিন গেছে , আমার পাল্লায় পড়ে চায়ের নেশা তাঁর ঘুচেছে !
 দিনে এখন শুধু তিন কাপ । তাও সেটা চিনি ছাড়া লিকার চা ।
 আর সবচেয়ে খুশীর খবর যে এখন তিনি সেটা বানাতে শিখে গেছেন , মাঝে মাঝেই নিজে বানিয়ে নেন আর আমাকেও দেন !
পায়ের ওপর পা তুলে দিয়ে সোফার ওপর বসে টি ভি দেখতে দেখতে সেই চা খেতে যে কি ভাল লাগে আহা তোমাদের যে কি করে বোঝাই !!

লিপিকার দিনলিপি ৩



২০ শে আগস্ট 

         কাল রাত্রে যখন ফোন করলাম শিরিণকে গলা শুনে মনে হচ্ছিল বেশ কান্নাকাটি করেছে । তাহলে এখন কথাটা বলতে পারি , কাঁদলে মন হাল্কা হয়ে যায় । ধাক্কাটা নিতে পারবে । ধীরে ধীরে রমেন মিত্রর সঙ্গের কথোপকথন সব জানালাম ।

           “ঠিক আছে , ভাল হল জানতে পারলাম”, দীর্ঘশ্বাস টা লুকল শিরিণ । তার মানে উত্তরটা নেগেটিভই’ । 

         “তা কেন এখন থেকে ধরে নিচ্ছিস , পজিটিভ ও তো হতে পারে” আমি একটু আশা যোগালাম , একেবারে হঠাৎ করে মনটা ভেঙ্গে দিতে চাইলাম না , “ বলল ত দাদার সঙ্গে কথা বলতে যাবে এই উইকে । দেখা যাক না কি বলে ?”

            “যাই বলনা লিপিকা , উনার কিন্তু আমাকে দ্বিতীয়বার ফোন করা উচিত হয়নি” শিরিণের গলায় অভিমান ।

            “সে তো একশবার ! দাড়া না ,সোমবার কি জবাব দেয় দেখি, যদি নেগেটিভ কিছু বলে আমিও ছাড়বনা , অবশ্যই এই কথাটা জিজ্ঞাসা করব , ‘তাহলে কেন ওকে ফোন করে ও কেমন আছে জানতে চেয়েছিলেন ?”

               “হ্যাঁ , এই কথাটা বলবি যে একজনের মনে আশা জাগিয়ে এভাবে ফোন করা মানে তাকে অপমান করা । উনি তো আরও অনেক পাত্রীকে দেখতে যাবেন বলে দিস এরকম ব্যাবহার তাদের সঙ্গে যেন না করেন”, এবার শিরিনের গলায় রাগ ঝরে পড়ল ।

           “তা আর বলতে ! একেবারে তুলোধূনো করে ছাড়ব ব্যাটাকে ! আমার বন্ধুর মনে কষ্ট দেওয়া” !! হাসাতে চাইলাম ওকে । সফল হলাম । একেবারে হা হা করে হেসে উঠল , “ হ্যাঁ , বাছাধন জানেনা তো যে কার পাল্লায় পড়েছে !”  এবার আমিও বেশ মন খুলে হাসলাম । শিরিণের মুখে হাসি আনতে পেরেছি এটা আমাকে খুব আনন্দ দিল । 

                    আমার মনে এখন একটা কথা বারবার উঁকি দিচ্ছে , শিরিণকে এই ব্যাপারটার মধ্যে টেনে এনে ভুল করলাম না তো ? বেশ তো ছিল একা একা , নিজের জীবনটাকে মোটামুটি পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে সময় কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছিল । আমি আবার ওকে স্বপ্ন দেখালাম , ওর চোখে আশার কাজল পরালাম , এই স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবেনা তো ? এই কাজল চোখের জলে মুছে জাবেনা তো ?  হে ভগবান ! তা যেন না হয় । আমি আর তাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবনা কোনদিন । 

                  সেই দিনটা আজও মনে আছে । সকালে শিরিণের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল ,   ও বলল আগের দিন রাত্রে হঠাৎ প্রচণ্ড মাথা ঘোরা শুরু হয়েছিল, বিছানা থেকে কিছুতেই উঠতে পারছিলনা অথচ বাথরুমে যেতেই হবে । কোনরকমে দেয়াল ধরে ধরে বাথরুমে যায় তারপর অনেকক্ষন শাওয়ার চালিয়ে তার নিচে দাঁড়িয়েছিল । একটু ঠিক লাগার পর ওই ভেজা জামাকাপড় পরা অবস্থাতেই বিছানায় এসে শুয়ে পরে । ওঠার শক্তিটুকু পর্যন্ত্য ছিলনা । ভোরে উঠে কোনরকমে একটা অ্যানটাসিড খেয়ে আবার শুয়েছে । অত রাতে কাউকে ডাকতেও সাহস পাচ্ছিল না ।

                  এই কথাটা শোনার পর থেকেই আমার মনে একটা অস্বস্তি হতে শুরু করেছিল । সারাদিন শুধু ওর কথা ভেবেছি, আহারে ! একটা মেয়ে কি অসহায় হয়ে জীবন কাটাচ্ছে ! মা নেই, বাবা নেই,ভাই বোন কেউ নেই ! শুধু কোচিং সেন্টারে আর ঘরে ছাত্র পড়িয়ে নিজের সংসার নিজে চালাচ্ছে । বাবা সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট অফিসে কাজ করতেন বলে  অবিবাহিত মেয়ে হিসেবে বাবার পেনশনটা পায় ও । এটা একটা বিরাট সিকিউরিটি , অন্ততঃ বাড়িভাড়া , ইলেক্ট্রিসিটির বিল ,মাসের চাল ডাল এগুলো তো হয়ে যায় , টুইশনি তো কোন ঠিক নেই কোন মাসে কম কোন মাসে বেশী ।

               এরকম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে দেখবে কে ওকে ? নিজেকে ওর জায়গায় রেখে দেখতে গিয়ে শিউরে উঠলাম । ভীষণ একটা কষ্ট হচ্ছিল । মনে হল ওর যদি একটা বিয়ে দিতে পারতাম খুব ভাল হত , কিন্তু ও কি রাজী হবে ? ৫০ পেরিয়ে গেছে, এই বয়সে আমার বলাটাই কি উচিত হবে ? পাত্রই বা কোথা থেকে যোগাড় করব ? এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ে গেল সন্তুদার কথা ।

              আরে হ্যাঁ  , সন্তুদাই তো এখনও বিয়ে করেনি , আমরা আগে খুব পেছনে লেগে থাকতাম বিয়ে করো বিয়ে করো  বলে, তারপর ছেড়ে দিয়েছি , সন্তুদা আমাদের থেকে ৩/৪   বছরের বড় । আমার মাসতুতো বোন টিনার দ্যাওর । টিনার বিয়ে আমাদের পাড়াতেই হয়েছিল । সন্তুদাকে আমরা ছোটবেলা থেকেই চিনি । অবস্থা বেশ ভালো , পার্ক স্ট্রীটে নিজের ওষুধের দোকান আছে । যাদবপুরে নিজেদের ফ্ল্যাট , সঙ্গে শুধু ওর মা মানে রুনুপিসি থাকে । 

              এই তো বেশ ভাল জুটি হবে মনে হচ্ছে । কিন্তু তার আগে শিরিণকে রাজী করাতে হবে । তাই ফোন করলাম ।