Bengali Poems

Read Bengali poems & short stories by Rina Ghosh. Please feel free to comment on the posts.

প্রেমের চতুর্দশী, চোদ্দই ফেব্রুয়ারী




কষে বাঁধার দিন এসেছে ভালবাসার রশি
ও গিন্নী চল মানাই প্রেমের চতুর্দশী ।
হইনা আমি বাহাত্তুরে তুমি ষাটের শেষে
ফুরফুরে এই মন যেতে চায় প্রেম জোয়ারে ভেসে ।  
আজকালকার প্রেমিক জোড়া যেমন করে ঘোরে
তেমন করে জড়িয়ে তোমায় ঘুরতে ইচ্ছে করে ।
তোবড়ানো এই গালে আমার মেরে হাল্কা টুসকি
ফোকলা দাঁতে ছড়িয়ে দিও মিষ্টি হাসির ফুলকি ।
লাল গোলাপ গুঁজে রেখো পাকা চুল খোলা রেখে
রেখায় ভরা মুখটি তোমার দেখবো ঘোলা চোখে ।
শীর্ণ হাতে হাত জড়িয়ে সিনেমা দেখতে যাবো
হনিমুনের সেই কটা দিন আবার ফিরে পাবো ।
রেস্টুরেন্টে বসে হবে ক্যান্ডেললাইট ডিনার
চকলেট আর টেডি বিয়ার দেবো উপহার ।
রাম শ্যাম যদু ও মানায় ভ্যালেন্টাইন ডে
আমরা কেন রইব পিছে  কি বলবে কে ?
আজ ভাবো না আমার একুশ তুমি অষ্টাদশী
চল চুটিয়ে মানাই আমরা প্রেমের চতুর্দশী ।
                          রিনা ঘোষ

নকুল বাবুর ফিজিওথেরাপি


  “বংশে কারও সারভাইকাল আছে নাকি ?”
ডাক্তারবাবুর এই প্রশ্নে নকুল বাবু থতমত খেয়ে গেলেন ।
            এ কোন ধরণের আজব সাইকেল রে বাবা !  এরকম কোন বাহন কখনও চোখে দেখেছেন বলে তো মনে পড়ছে না ! ইস্কুলের সাধারণ জ্ঞানের বইতে এর কোন ছবি দেখেছেন বলেও তো মনে পড়ছে না ! তবে আজকাল তো কত নতুন আবিষ্কার হচ্ছে , এটা হয়ত তার মধ্যেই একটা হবে ! কিন্তু তার সঙ্গে আমার বংশের কি সম্পর্ক ? এই অদ্ভুত বাইসাইকেলটি আমার গুষ্টির কারও থাকা না থাকার সঙ্গে আমার ঘাড়ে ব্যাথার কি সম্পর্ক রে বাবা ! নকুল বাবু ঘোর চিন্তায় পড়লেন ।
কিছু একটা কারণ তো নিশ্চয়ই আছে নইলে ৫০০ টাকা ভিজিট নেওয়া ডাক্তার এমনি এমনি কেন জিজ্ঞাসা করবেন ? উঃ ! কি কুক্ষনেই যে প্রতিবেশী তেজেনবাবুর কথায় এইরকম একটি অতি অনুসন্ধানী ডাক্তারের কাছে আসতে রাজী হয়ে গেছিলেন ! এর চেয়ে তো ঘোষ পাড়ার শিবু ডাক্তার ঢের ভালো । প্রেসেন্ট টেন্স জেনেই সন্তুষ্ট থাকেন পাস্ট টেন্স ঘাঁটতে  যাননা ।   
     বাধ্য হয়ে চোখ বুজে প্রাণপণে মনে করতে চেষ্টা করলেন নকুল বাবু । বাবার তো কোন দু-চাকা ছিল বলে মনে পড়ছে না , কিন্তু ছেলেবেলায়  ছিল কি ? না, সেরকম তো কিছু শোনেননি কখনো । আচ্ছা ন’ জ্যাঠা , পুঁটুকাকু ,বুলুমামু, মনুকাকু, নরেন মামা এঁদের কারও কাছে ছিল কি ? কিন্তু নাম শুনে তো মনে হচ্ছে এটা  নতুন যুগের সাইকেল তাহলে ওনাদের কাছে থাকবে কি করে ? নাকি এটা ওই  সময়কালেরই ! চলেনা বলে এখন অবলুপ্ত হয়ে গেছে !
         সত্ত্যি এখন খুব আফসোস হচ্ছে  কেন যে উনি স্ত্রী তরলাকে সঙ্গে আনলেন না ! পাড়া পড়শি দের ফ্যামিলি হিষ্ট্রি  পর্যন্ত ওর নখদর্পণে থাকে ,আর নিজেদের বাড়ীর সাইকেল- হিষ্ট্রি  কি অজানা থাকবে তার কাছে ?  আসার আগে তরলা বেশ কয়েকবার বলেওছিল , ‘আমিও তোমার সঙ্গে চলি, কি বলতে কি বলে বসবে অত বড় ডাক্তারের কাছে !’
         শুনেই প্রেস্টিজে এ ঘটাং করে ঘা লেগেছিল নকুল বাবুর  হলুমই না বাপু আমি কেবল ক্লাস ফোর পাশ , তা বলে কি  সভ্য সমাজে আমার কোন দাম নেই ? ভজহরি ময়রার ছেলে আমি ! নিস্তারিণী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারটা তো আমারই হাতে গড়া দোকান ! আমি বড় ডাক্তারের সঙ্গে নিজের রোগ নিয়ে কথা বলতে পারবনা ? হুঃ ! নিজে এইট পাস বলে কি দেমাক !  
          তরলার কথা উপেক্ষা করে এক্স-রে র বড় খামটা বগলদাবা করে ঘর থেকে গটগটিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন । কিন্তু কে জানতো বংশের সাইকেল নিয়ে এমন নাকানিচোবানি খেতে হবে ! আচ্ছা লজ্জার মাথা খেয়ে একবার তরলাকে ফোন করে জেনে নেওয়া যায়না ? হ্যাঁ এটা তো ভাল বুদ্ধি ! নকুল বাবু পকেটে রাখা মোবাইলের দিকে হাত বাড়ালেন ।
         “কি হল মনে পরছেনা ?” ডাক্তারবাবু একটু বিরক্ত হয়েই প্রশ্ন করলেন । “আজ্ঞ্যে না মানে ঠিক –” নকুল বাবুর হাত ছিটকে এল পকেট থেকে
   “মাথা ঘোরা , ঘাড় ব্যাথা এসব কারও ছিল ?” ডাক্তারবাবু এবার জিজ্ঞাসা করলেন ।
যাচ্চলে ! এটা আবার একটা কথা ? ধরের ওপর ঘাড় থাকলে  ঘোরা টোরা, ব্যাথা ট্যাথা এসব ঝক্কি তো পোয়াতেই হয়  কখনও না কখনও !এ নিয়ে আবার বলাবলির কি আছে ? নকুল বাবু আর থাকতে পারলেন না । মুখ ফস্কে বেরিয়েই এল “কিন্তু এর সঙ্গে সাইকেল থাকার কি সম্পর্ক ?”
   “সাইকেল ? কি সাইকেল ?” ডাক্তারবাবু দ্বিগুণ আশ্চর্য হলেন ।
   “ওই যে আপনি জিজ্ঞাসা করলেন না কি একটা সাইকেল আমাদের বংশে আছে কি না ?” নকুল বাবু মিনমিনে গলায় উত্তর দিলেন । ইংরিজিটা যে উনার সড়গড় নয় ডাক্তারটা ঠিক বুঝে গেল নিশ্চয়ই ।
       রামগরুড়ের ছানার মত চেহারার ডাক্তারের মুখে হঠাৎ আকর্ণ হাসির বাঁকা চাঁদ দেখে নকুল বাবু হাঁ করে রইলেন ।
       “আরে না না । সাইকেল নয় সারভাইকাল , নেক স্পডিলাইটিস , এটা ঘাড়ের অসুখ বুঝেছেন ?”      রামগরুড়ের বত্রিশ পাটি যেন আর বন্ধই হতে চায়না !
      “তা এর সঙ্গে আমার পূর্ব পুরুষের কি সম্পর্ক ? দেখাতে তো এসেছি আমার  ঘাড়ের এক্স রে !”  
নকুল বাবু এবার এক হাত নিতে চান । ব্যাটা বিলেতফেরত ডাক্তার ভেবেছেটা কি ? আমিও নকুল ময়রা ! তুমি যেমন অসুখ ঘাঁটো  আমিও তেমন  ছানা ঘাটি ! আমার প্রেস্টিজের নিকুচি করা ?
       মনে হল কাজ হল কিছুটা । ডাক্তারের দাঁত কপাটি  চিচিং বন্ধ হল । কিন্তু কুতকুতে চোখে যেন একটু তরল হাসির গ্যাস ঘুরপাক খাচ্ছে , “ দেখুন আপনার যে এই রোগটা হয়েছে এটা বংশগত কারণের জন্য ও হতে পারে তাই জানতে চেয়েছিলাম ফ্যামিলিতে আর কারও এটা আছে কিনা । এতে  চিকিৎসার সুবিধে হয় ।”
এবার নকুল বাবুর বেলুন চুপসে গেল ঘাড় গুঁজে চুপ মেরে রইলেন । ডাক্তারবাবু আর কিছু না বলে ঘসঘস করে প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেন, “ফিজিওথেরাপি শুরু করে দিন  আজ থেকেই ।”
       ও বাবা ! বলে কি ? পিজিওতাপি ? মানে সেই দলাই মলাই ?  এই পিজিওতাপি যে কি জিনিস আমি  ভাল করেই জানি বাপু ! বাঁধা  খদ্দের নলিনী বাবুর ভাঙ্গা পায়ে এই পিজিওতাপি করে এমন অবস্থা হয়েছিল যে ৭ দিনের মধ্যে  তিনি ফক্কা হয়েছিলেন ।
 যদিও অনেকে এটা তাঁর মৃত্যুর কারণ বলে মানতে চান না কিন্তু যে যা বলে বলুক তিনি কিন্তু মানেন । ছানা দলাই মলাই  আর একটা জ্যান্ত মানুষের ভাঙ্গা পা দলাই মলাই এর মধ্যে ফারাক নেই ?  
      “না না ডাক্তারবাবু আমি ওসব তাপি টাপি করবনা ।”   নকুল বাবু ঘাড় নাড়িয়ে ঘোর অসন্মতি জানান
          “কিন্তু যদি এখন না করেন তাহলে কিন্তু খুব  শীগগীরই আপনাকে ঘাড়ে কলার পরতে হবে ।” ডাক্তারের কুতকুতে চোখ যেন আরও ছোট হয়ে এল ।
          ঘাড়ে কলার ?? ওরে বাবা !  চিন্তায় একেবারে চোখের সামনেই যেন নিজেকে দেখতে পেলেন নকুল বাবু । গলায়  মোটা শক্ত কলার ,ঘাড় নড়াচড়া করার উপায় নেই, কাঠ পুতুলের মত চলছেন, হাতে ধরা ভাতের গ্রাস যেন মাউন্ট এভারেস্ট পেরিয়ে মুখের জহর টানেলে ঢুকছে ! তিনি মল্লিক বাড়ীর পোষা কুকুরের মত রাস্তা দিয়ে চলেছেন, তরলার হাতে এক মস্ত চেন , নকুল বাবুর কলারের সঙ্গে আটকানো । যখন তখন ঘ্যাঁচ করে টান দিচ্ছেন আর অমনি নকুল বাবু জিভ বার করে পড়ি কি মরি করতে করতে দাঁড়িয়ে পড়ছেন ।
               না-আ-আ-আ ! এ হতে পারেনা ! কুলকুল করে ঘামতে লাগলেন নকুল বাবু । “না না ডাক্তারবাবু, আমি কলার পরবো না,আমি তাহলে  ওই আপনি যা বললেন ওই পিজিওতাপী ই করব । কিন্তু ইয়ে মানে ওই দলাই মলাইটা   যেন বেশী না হয়ে  যায় । মানে একটু যদি হাল্কা হাতে করতে  বলে লিখে দেন !” নকুল বাবু আমতা আমতা করেন ।
     “চিন্তা করবেন না , এখানে সব লিখে দিলাম, এইটা নিয়ে দোতলায় পি. টি. আর. –এ চলে যান , ওরা সব বলে দেবে ।”
“পি. টি. আর. ? মানে ? অপারেশন টপারেশন নয় তো ?”
নকুল বাবু আঁতকে ওঠেন ।
     ডাক্তারবাবুর এবার একেবারে গলা খুলে হো হো  করে হেসে  উঠলেন“আরে মশাই না না, আপনাকে অপারেশন করাতে পাঠাচ্ছিনা । পি. টি. আর. মানে হচ্ছে ফিজিওথেরাপী রুম ! পাশের সিঁড়ি ধরে দোতলায় চলে যান, পেয়ে যাবেন ।”
      এহে ! ছি ছি ! দেখেছো ! মুখ্যুতাটা ঠিক শেষ মুহূর্তে ধরাই পরে গেল ! তরলাকে সঙ্গে না আনার আফসোসটা আবার নতুন করে চাগাড় দিয়ে উঠল নকুল বাবুর ।
       “ওহো ! আচ্ছা পি. টি. আর. ? আমি অন্য কিছু শুনেছিলাম তাই ভাবলাম- ” নকুল বাবু তুচ্ছ করে কথাটা হাওয়ায় ওড়াতে চেষ্টা করলেন ।
কিন্তু ডাক্তারবাবুর চোখ তখনও হাসিতে চিকচিক করছে দেখে তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ৫০০ র নোট বের করে টেবিলে রেখে দিয়েই দুরন্ত গতিতে রুম থেকে বেরিয়ে এলেন ।
উফ ! কি বিপদেই না পড়া গেছে ! এখন কি করবেন ? বাড়ী ফিরে যাবেন নাকি ওই তাপীই করাবেন ? সাতপাঁচ অনেক  চিন্তা করে শেষে ঠিক করলেন ওই পি. টি. আর. এই যাবেন । তরলার চেনে বাঁধা কুকুর হয়ে ঘোরাফেরা তিনি করতে পারবেন না !

         সিঁড়ি বেয়ে চলে এলেন দোতলার সেই নির্দিষ্ট রুমে । কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলে উঁকি দিলেন ভেতরে । ও বাবা ! এ যে  একটা ছোট খাটো নরক ! একজন একটা বড় গামলার ওপর পা দিয়ে রেখেছে , সাদা অ্যাপ্রন পরা সিস্টার তার ওই পায়ে মগে করে গরম গরম গলা মোম ঢালছে আর লোকটা আঃ উঃ করে ককিয়ে চলেছে ! কেউ শুয়ে কেউ বসে ,তাদের হাত নয়ত পা  কোন না কোন যন্ত্রের সঙ্গে লাগানো, কেউ বা উপুড় হয়ে শুয়ে আছে সিস্টার তার পিঠে ধোঁয়া ওঠা গরম কোলবালিশ চেপে ধরছে !
একটি ছোট বাচ্চার পায়ে লোহার জাল পরিয়ে রেখেছে সে বেচারা হাতে ভর করে এদিক ওদিক যাবার চেষ্টা করছে কিন্তু জালের ভারে পা তুলতেই পারছেনাআর একটা  ছোট  মেয়েকে তো বিছানায় চিৎপটাং করে ফেলে তার পোলিও আক্রান্ত  পা দুটো দুই সিস্টার নির্দয়ের মত বারবার টেনে  টেনে দিচ্ছে আর  মেয়েটা ব্যাথার চোটে তারস্বরে কেঁদে উঠছে
          হে বাবা লোকনাথ ! এ আমি কোন জায়গায় এসে পড়লাম ! যম লোকে যাবার আগেই এই নরক যন্ত্রণা আমায় সহ্য করতে  হবে  ? আমি তো খোয়াতে খুব একটা বেশি ভেজাল মেশাই না প্রভু ! এবার থেকে সেটুকুও নাহয় বন্ধ  করে দেবো । হে ভগবান  রক্ষে কর রক্ষে কর ! নকুল বাবু হাত জোড় করে  চোখ বুজে  কাঁপতে লাগলেন ।  
      “দেখি আপনার স্লিপ ” সিস্টার তো নয় যেন যমদূত ! বলির পাঁঠার মত নকুল বাবুর কাঁপা কাঁপা হাত থেকে ছিনিয়ে নিল প্রেসক্রিপশনএকবার চোখ বুলিয়ে বড় সিস্টার ছোট সিস্টারকে হাঁক দিলেন, “ইনার এউ. এস. ,এম. এইছ. টি.,  আই .এফ. টি. আর এস. ডবলু. ডি. হবে অল্টারনেট করে করিয়ে দাও”
নকুল বাবুর চক্ষু চড়কগাছ ! এর মানে ? ইয়ে এর মানে কি রে ভাই ? এঁদের কি করে জিজ্ঞাসা করেন ? ডাক্তারবাবুর মতন এরাও যদি ফ্যাকফ্যাক করে হাসতে শুরু করে দেয় ? মেয়েছেলেদের কাছে মাথা নিচু হবে ? জন্মে নয় ! তার থেকে নিজের বুদ্ধি কাজে লাগানো যাক ।
৬ জন কারিগর নিয়ে মিষ্টির দোকান চালাই আর এখানে একটু বুদ্ধি কাজে লাগাতে পারবনা ? নকুল বাবু নড়েচড়ে ওঠেন । খুব একটা কঠিন কঠিন কাজ তো নয় ডাক্তারবাবু বললেন পি টি আর মানে  পিজিওতাপী রুম তা হলে এরকম  করে ধরতে গেলে –
 নকুল বাবু চোখ বন্ধ করে ভাবতে শুরু করলেন
এক মিনিট , দুই মিনিট । তিন মিনিট । নকুল বাবুর চক্ষু  চরকগাছ ,টেকো মাথায় দরদরে ঘাম ,নাকের চুল খাঁড়া ,  ঘোলাটে চোখে যেন পলক পড়েনা । তিনি এবার মানে খুজে পেয়ে গেছেন ।
এউ. এস. – মানে, ‘উল্টো শোয়াও’ !!
এস. ডবলু. ডি. – মানে, ‘শীর্ষাসন উইথ ডিগবাজী’ !!
আই. এফ. টি. – মানে , ‘ইচ্ছামতো ফেলে টানি’ !!
এম. এইছ. টি. -  মানে ‘মেরে হালুয়া টাইট’ !!
নকুল বাবুর কান মাথা ভোঁ ভোঁ করতে লাগলো । তাকে এবার শুইয়ে এরকম দলাই মলাই করবে এরা ? এ কি ধরনের পিজিওতাপি ? কোন ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন না তো ? পাশের বাড়ীর তেজেনবাবু, স্ত্রী তরলা, শ্যালক মধুসূদন, ভাইপো বিরু এদের জোরাজুরিতেই তো এই ডাক্তারের কাছে আসা । তবে কি সবাই মিলে তাকে কোনও ফাঁদে ফেললো ?
“আরে ও মশাই কতক্ষন ধরে আপনাকে ডাকছি কানে যাচ্ছেনা ? আসুন দিকি এইখানে ” যমদূত সিস্টারটি নকুল বাবুর হাত  ধরতে যান
     “ ওরে বাবারে ! আমায় মেরে ফেলল রে !”  নকুল বাবু  বিকট চীৎকার করে এক লাফ দিলেন ।পড়বি তো পড় একেবারে যে সিস্টার গরম মোমের মগ হাতে নিয়ে  বসেছিল তার গায়ের ওপরে । সে তো অসম্ভব চমকে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে হাতের মগ ফেলে দিল আর গরম গলা মোম ছিটকে পড়লো গিয়ে নকুল বাবুর পশ্চাৎ দেশে !
 “আই বাপ !” বলে নকুল বাবু দুই হাত দিয়ে পশ্চাৎ দেশ চেপে ধরে আকাশের দিকে মুখ রেখে বিকট চীৎকার করতে করতে সেই  যে চোঁ চাঁ দৌড় লাগালেন, নিজের ঘর না আসা অবধি আর থামলেন না ।
             পরে খবর নিয়ে জেনেছি  সেইদিন আট ঘণ্টা তিনি চৌবাচ্চায় নিম্নাঙ্গ ডুবিয়ে বসেছিলেন আর বেরিয়ে আসার পর থেকে যাকে যা নয় তাই বলেই গালাগালি দিচ্ছেন ! আমার বাপু আর সাহস হয়নি খোঁজ খবর নেবার । তোমাদের দরকার থাকলে তোমরা যাও , আমায় ডেকো না !!   

( যাদের নকুল বাবুর ফিজিওথেরাপি সম্বন্ধে জ্ঞানগম্যির ওপর অগাধ সন্দেহ আছে তাদের জানিয়ে রাখি –
এউ. এস. –আলট্রা সাউন্ড
এস. ডবলু. ডি. – শর্ট ওয়েভ ডায়াথারমি
আই. এফ. টি. – ইন্টার ফেরেন্সিয়াল থেরাপী
এম এইছ টি- ময়েস্ট হিট থেরাপী )
                                  রিনা ঘোষ