Bengali Poems

Read Bengali poems & short stories by Rina Ghosh. Please feel free to comment on the posts.

মহান স্বামী


মহান স্বামী


আমি নারী,তুমি পুরুষ
      তুমি আমার মহান স্বামী,
বাঁকা হলেও ‘সোনার আংটি’
       দোষবিহীন, অনেক দামী !
রঙটি আমার কাঁচা সোনা
        মুখটি যেন পটে আঁকা
‘দু’লাখ’ তবু করলে দাবী
         ও যে তোমার ‘প্রাপ্য টাকা’ !
রূপে লক্ষ্মী গুনে আমি
        যতই না হই সরস্বতী
আদেশ তোমার মানতে হবে
      করতে  হবে আমায় নতি !
আমি নারী,তুমি পুরুষ, তুমি আমার মহান স্বামী !
তোমার গায়ের রঙটি নিয়ে
        জন্ম নিল কন্যা যেই
দোষ পেলে আমার তুমি
        ‘পেটের কোনও গুন-ই নেই’ !
অফিসে যাও আমার পরে
         ফিরে আসো আগে,
ঘর-সংসার,বাচ্ছা দেখা
          সবই  আমার ভাগে ।
বন্ধু তাস আড্ডা পার্টি
         চুটিয়ে চলে রবি শনি,
আমার এসব করতে মানা
         বসে উলের টুপি বুনি ।
তোমার দুটো হাঁচি হলে
         নার্সিং হোমে ভর্তি হবে,
আমার বেলায় ‘ও কিছু নয়’
           ‘আপনা হতেই সেরে যাবে’ !
ছেলেমেয়ের পড়া নিয়ে
           প্রাণপাতটি আমি করি,
প্রাইজ নিয়ে বাড়ী এলে
         ক্রেডিট টা যে সেই তোমারই !
মেয়ের বিয়ে,ছেলের চাকরী
         সবই হল সময়ে
ঘানি টেনে চলছি তবু
         এই সংসার বলয়ে ।
স্বামী,পুত্র,কন্যা এঁদের
          সবার জন্য বেঁচেছি,
নিজের মত বাঁচার জন্য
          সময় খুঁজে চলেছি ।
তিরিশ বছর পেরিয়ে গেল
          পায়ের শেকল খুলল না,
চালডালেরও দাম বাড়ে হায়
         আমার দাম আর বাড়ল না !
আমার শখ আমার সাধ
         তোমার কাছে অদামী
তোমার মেকী  দর্পছায়ায়
          মিলিয়ে গেলাম এই আমি ।
আমি নারী,তুমি পুরুষ,তুমি আমার মহান স্বামী !

নতুনতায় নতুন



নতুন বছর,নতুন আশা, নতুন কিছু প্রেমের ভাষা
নতুন দেহের নতুন প্রাণের নতুন ধরায় বাঁচতে আসা ।
নতুন সে এক দৃষ্টি নিয়ে নতুন করে দেখতে চাওয়া
নতুন ভালবাসার টানে নতুনভাবে হারিয়ে যাওয়া ।
নতুন মনের নতুন বীণায় নতুন সুরের নতুন তান
নতুন রবির নতুন আলোয় নতুন ভোরের পাখীর গান ।
নতুন মেঘের নতুন রঙের নতুন সাজের নীল আকাশ
নতুন বেলায়,নতুন দোলায় দুলিয়ে দিলো মৌ বাতাস ।
নতুন ছোঁয়ায় ,নতুন মায়ায় নতুনতার এই কায়া
নববর্ষে মিলিয়ে যাক সব হারানোর সেই ছায়া ।

একটি বন্ধ দরজার এদিক ওদিক


একি ! এই অবেলায় এখনো শুয়ে আছো !
ওঠো ওঠো, দ্যাখো ঘর ভর্তি লোক চারিপাশে ।
কি ভাববে বল তো সবাই ?
পারোও বটে এত নিরাসক্ত হয়ে ঘুমোতে !
ঘরে এত লোক ! কিন্তু সবাই নিঃশব্দ ! কেন বলতো ?
তোমার ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষায় ?
আমায় যেন কেমন চোখে দেখছে ওরা !
বেশ অস্বস্তি লাগছে, শাড়ীটা কি খুব বেশী পাতলা ?
আমার কি দোষ ? এটা তো তোমারই কিনে দেওয়া শাড়ী !
তুমিই তো আজ সকালে বলে গেলে, ‘এটা পরে থেকো বিকেলে,
তোমাকে নতুন করে দেখব আজ’ ।
আজ যে আমাদের বিবাহবার্ষিকী !
ও তাইতো ! ফুল ! ফুল কোথায় ?
তুমি তো ফুল ছাড়া ঘরে ঢোকোনা  এইদিনে ?
ওমা এইতো ! দেখেছো চোখের মাথা খেয়েছি !
এই তো তোমার বিছানায় এত্ত ফুল !
কিন্তু সাদা কেন ? সব সাদা ফুল ?
সাদা তো তোমার একদম পছন্দ নয় !
কে রাখল এখানে ? ফেল,ফেলে দাও, ছুঁড়ে ফেলো সব !
একি ! তোমরা আমায় বাধা দিচ্ছ কেন ?
কি বলতে চাইছ ? আরে বিবাহবার্ষিকীতে কেউ সাদা ফুল আনে ?
ও কি ! আবার পারফিউম স্প্রে করছ কেন ওর গায়ে ?
দেখি দেখি এটা কোন ব্র্যান্ডের  ?
না না, এটা ওর একেবারে পছন্দ নয় !
এর গন্ধ ও একদম সহ্য করতে পারেনা !
কেন তোমরা এরকম করছ ?
ওগো তুমি ওঠো তো তাড়াতাড়ি, দ্যাখো,
এরা সব কেমন পাগলামি শুরু করেছে !
বিবাহবার্ষিকী বলে কি যা খুশী তাই করবে ?
রাঙ্গাপিসি আবার আমাকে কপালপুড়ি বলে জড়িয়ে ধরছে !
হলটা কি উনার ?
মেজকাকিমা আমার মাথাটা ধরে তোমার পায়ে ঠেকিয়ে দিচ্ছে !
এটা কি বড্ড বাড়াবাড়ি নয় ?
তুমি ওঠো তো ! এদের সব্বাইকে বকে দাও ।
গত বছর এই দিনে আমি কি তোমায় প্রণাম করেছি ?
তবে কেন এবার করব ? তৃতীয় বিবাহবার্ষিকী বলে ?
ইশ্ ! মোটে তো দুবছরের বড় তুমি আমার থেকে !
 তবু করা যেতে পারে ! কিন্তু করব না এখন । কেন বল তো ?
ঠাকুমা বলে ঘুমন্ত মানুষের পা ছুঁতে নেই ।
অশুভ হয় । এরা কি জানেনা সেটা ?
এই,তুমি ওঠো তো ! এবার কিন্তু বড্ড বেশী হয়ে যাচ্ছে ।
ওরা তোমার খাট ধরে টানাটানি করছে !
আরে ! ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ তোমরা ?
এভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় কাউকে নিয়ে যায় ?
আরে, পড়ে যাবে যে ! কেন কেউ আমার কথা শোনে না ?
পিসিমা ,এ কি বলছেন ? কাঁদবো কেন আমি ?
কাঁদতে কেন বলছেন ? এই শোন ,
তুমি কিছু বলছ না কেন ?
আমাদের যে আজ বাইরে খাবার প্রোগ্রাম !
শুধু তো আমাদের দুজনের যাবার কথা ছিল !
এদের আসার কথা তো ছিলনা ?
এই, ওঠো ওঠো, লক্ষ্মীটি , প্লীজ ,দ্যাখো,
মহিলারা সবাই আমাকে কেমন চেপে ধরেছে !
ওকি ! তোমাকে ওই লোকগুলো নিয়ে চলে যাচ্ছে যে !
কোথায় ? কোথায় নিয়ে যাচ্ছ ওকে ?
ওকে আগে জাগতে দাও ! আমার সঙ্গে কথা বলতে দাও !
আমাকে যে ও অনেকক্ষণ ‘শীলু’ বলে ডাকেনি !
ওর জন্য যে আজ ‘মোমো’ বানিয়ে রেখেছি, ওর প্রিয় খাবার !
সেটা তো খেয়ে যেতে দিতে দাও !
ছেড়ে দাও আমাকে ! এই,তুমি কেন জাগছ না ?
জানি আমি চীৎকার করছি,জানি তুমি পছন্দ করনা ।
কিন্তু এরা যে আমার কথা কেউ শুনছে না !
এরা তোমাকে অভদ্রের মত খাটে করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে !
মীনুবৌদি আমাকে ঝাঁকিয়ে বলছে,কাঁদ,কাঁদ একটু কাঁদ !
এরকম অত্যাচার করছে কেন আজ ওরা ?
ওই দ্যাখো ! আমার কথা কেউ শুনল না !
ওরা তোমাকে নিয়ে গেল ।
পিসিমা , মাসীমারা হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠল কেন কে জানে ?
আজ কি পয়লা এপ্রিল ? কি জানি তারিখটা তো মনে পড়ছেনা ।
আমার তো কিছুই মনে পড়ছেনা ছাই !
না পড়ুক,বুঝতে পারছি সবাই মিলে
একটা ষড়যন্ত্র করছে আমাকে বোকা বানানোর জন্য ।
মনে হচ্ছে তুমিও আছো এর মধ্যে ।
তাই তুমি মোটে চোখ খুললে না !
বেশ,আমিও হার মানব না ।
এই আমি ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলাম ।
আমার পরনে তোমার দেওয়া নেটের শাড়ী,
কপালে তোমার পছন্দের  লাল সিঁদুরের টিপ ।
তুমি ‘শীলু’ বলে না ডাকলে
এ দরজা আর আমি খুলবো না ।
***********************
***********************
***********************
দরজাটা আজও বন্ধ ।
শুধু ঘরটা পাল্টে গেছে
মানসিক হাসপাতালের অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘরের
এককোণে আমার ঠাঁই  এখন ।
সময়ের হিসেব সব গুলিয়ে যায় ।
সিঁদুর ওরা মুছে দিয়েছে ।
নেটের শাড়ীটা জানিনা কোথায় ।
ছানি পড়া ঘোলাটে চোখ
আজও উৎসুক হয়ে থাকে দরজার দিকে ।
কোঁচকানো চামড়ার নীচে
আজও আছে আমার সেই রজনীগন্ধা শরীর ,
শুধু তোমার স্পর্শের অপেক্ষায় .....
তুমি আসবে না ?

আমি


        
আমি দিক,আমি দিশা,
আমি তপ্ত মরুভুমির ঘরের আকুল করা তৃষা,  
আমার শ্বাসে জড়িয়ে আছে মহুয়া ফুলের নেশা
আমার কাজল চোখে হারায় বনপলাশীর ভাষা,  
আমার মায়াজালে বাঁধা প্রেম আর ভালবাসা,
বিদিশার –ই নিশা আমি মোহ সর্বনাশা,
প্রতীক্ষাতে যুগ কেটে যায় আমায় বাঁধার আশা ।