Bengali Poems

Read Bengali poems & short stories by Rina Ghosh. Please feel free to comment on the posts.

শব্দের বর্ণমালা



     

ঝুমকো  লতার  ঝুমকো  দুলের
     ঝুম  ধরানো  সেই  দুপুর,
টিপিটিপি  পায়ে  ফেরে
     পরিণীতার  পায়ের  নূপুর ।
ছলক  দিয়ে  ছলকে  ওঠে
      জলকে  চলা  তাঁর  কলস,
হরষ  ভাসে  আশার  আশে
       খুশী  ভরা  উষ্ণ   পরশ ।
দ্রিমি  দ্রিমি  তালে  দোলে
     দামাল  মাতাল  মাদল  বোল ,
কলকল  কল্লোলিনীর
     কালের  সুরের  কলরোল 
মন  মানাতে  মনমোহিনীর  
     মনোহারী   মণিহার,
গলায়  দিয়ে  সোপান  বেয়ে
     স্বপনপুরে  দেয়  সে  পার ।
দিনের  শেষে  নেশার  বিষে
     নিরাশারা  শূন্যে  ভাসে,
আশ্বাসের  আশা  নিয়ে
     আষাঢ়  মাসে  আবার    আসে ।
ঝরঝর   বারিধারায়
     ঝিরিঝিরি   ঝরণা  ঝরা,
রূপকুমারীর  রূপের  আলোয়
    রূপোলী  মন  পাগলপারা ।
মল্লিকার  এই  মালা  দিলো
     মন মালঞ্চের  কোন  মালী,
প্রিয়জনের  পদতলে
      খালি  হল  পূজার  থালি ।
অরণ্যেরই   গহনতায়
      অরুণ  আলোর  নতুন  ভোর,
দর্পহারার  দীপ্তি  নিয়ে
      দেদীপ্যমান  প্রানের  ডোর ।
চামেলি    চম্পা  যূথী
      চয়ন  করে  বরণ-ডালা
রঙ্গে  রঙ্গে  রঙ্গিন  হয়ে
      রাঙাল  এই  বর্ণমালা ।

দশেরার ঝুলন



        অবাক হয়ে গেলে নিশ্চয়ই ! ভাবছ এ আবার কেমনতর ঝুলন ? দুর্গাপুজায় আবার ঝুলন হয় নাকি ? না , আমরা যে অর্থে ঝুলন বুঝি ঠিক সেই অর্থে না হলেও ঝুলনে সাজানো পুতুল নিয়ে একটি উৎসব হয় দশেরাতে যারা কর্ণাটকে থাকেন তাঁরা জানেন এটি কর্ণাটকের একটি জনপ্রিয়  উৎসব । এখানে মহালয়া অমাবস্যা থেকে শুরু হয়ে যায় এই পুতুল উৎসবটি, অনেকটা আমাদের ঝুলনের মত । ওঁরা বলেন  “বম্বে  হাব্বা”বম্বে মানে পুতুল আর হাব্বা মানে উৎসব, Festival ,এটি চলে দশমী অবধি ।  
     ছোট, বড় নানা আকারের নানা ধরণের পুতুল প্রায় সবার ঘরে ঘরেই সাজানো হয় এইসময় তবে একটা খুব interesting ব্যাপার আছে পুতুল রাখার ব্যাপারে ।  
তাক বানিয়ে পুতুলগুলোকে তার ওপর রাখতে হয় । এই  তাকগুলো  ৫ বা ৭ বা ৯ টি হতে হবে, মানে বেজোড় সংখ্যায় হওয়া জরুরী
 আবার এই পুতুলের মধ্যে একটি রাজা-রানী পুতুল , একটি পিতল বা রুপোর জল ভরা কলসী , ৯ রকমের আনাজ শস্য আর তার পাশে একটি বনিক-দম্পতি পুতুল রাখা আবশ্যক । যেমন আমরা ঝুলনে রাধাকৃষ্ণের মূর্তি রাখি । 
এছাড়া  নানান দেবদেবীর মূর্তি, খেলনা, হাতি, ঘোড়া, গাড়ী, মানুষ-পুতুল সেখানে স্থান পায় । রোজ সন্ধ্যেয় পুজো হয়, প্রসাদ বিতরণ হয় । এক্কেবারে আমাদের ঝুলনের মত ।
                এই ‘বম্বে হাব্বা’কে ঘিরে একটি  চমৎকার গল্প  আছে । শুনবে ? পুরাণে কথিত আছে যে মহিষাসুর এত প্রচণ্ড শক্তিশালী ছিল যে যুদ্ধের সময় দেবী দুর্গা যখনই তাকে বধ করার জন্য আঘাত করছিলেন , তার ক্ষতস্থান থেকে গড়িয়ে পড়া প্রতিটি রক্তবিন্দু মাটিতে স্পর্শ করা মাত্রই এক একটি মহিষাসুরের জন্ম নিচ্ছিল । বাধ্য হয়ে দেবী  পৃথিবী–বাসীদের সাহায্য চাইলেন ।
মনুষ্য থেকে শুরু করে পশুপক্ষী , পোকামাকড় , জলজ প্রানী প্রত্যেকটি জীব দেবীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাদের নিজেদের  প্রানশক্তি মা দুর্গাকে দান করে আর অসাড় মূর্তিতে পরিণত   হয়ে যায় । তাদের দেওয়া এই শক্তি নিজের শক্তির সঙ্গে মিলিয়ে নেবার ফলে দেবী  দুর্গা মহিষাসুরের থেকে ত্রিগুণ শক্তিশালী হয়ে যান এবং নবমীর রাতে তিনি  যেই অসুরকে বধ করেন পর মুহূর্তেই  সেই সব অসাড় মূর্তিতে প্রাণ ফিরে আসে ।  
তারা আবার পুনর্জীবিত হয়ে ওঠে । সেইজন্য দশমীর দিন সব পুতুলগুলো তুলে ফেলা হয় । তারা তো তখন আর পুতুল বা অসাড় মূর্তি থাকেনা ! পুতুলগুলো আবার যত্ন করে বাক্সে গুছিয়ে রাখা হয় । কাগজে মোড়া চাদরে মুখ ঢোকাবার আগে তারা নিশ্চয়ই বলে যায় , “আসছে বছর আবার হবে’’ !! বলে নিশ্চয়ই ! কি বল ?