২০ শে আগস্ট
কাল রাত্রে যখন ফোন করলাম শিরিণকে গলা শুনে মনে
হচ্ছিল বেশ কান্নাকাটি করেছে । তাহলে এখন কথাটা বলতে পারি , কাঁদলে মন হাল্কা হয়ে
যায় । ধাক্কাটা নিতে পারবে । ধীরে ধীরে রমেন মিত্রর সঙ্গের কথোপকথন সব জানালাম ।
“ঠিক আছে , ভাল হল জানতে পারলাম”, দীর্ঘশ্বাস টা লুকল
শিরিণ । তার মানে উত্তরটা নেগেটিভই’ ।
“তা কেন এখন থেকে ধরে নিচ্ছিস , পজিটিভ ও তো হতে
পারে” আমি একটু আশা যোগালাম , একেবারে হঠাৎ করে মনটা ভেঙ্গে দিতে চাইলাম না , “
বলল ত দাদার সঙ্গে কথা বলতে যাবে এই উইকে । দেখা যাক না কি বলে ?”
“যাই বলনা লিপিকা , উনার কিন্তু আমাকে দ্বিতীয়বার ফোন
করা উচিত হয়নি” শিরিণের গলায় অভিমান ।
“সে তো একশবার ! দাড়া না ,সোমবার কি জবাব দেয় দেখি,
যদি নেগেটিভ কিছু বলে আমিও ছাড়বনা , অবশ্যই এই কথাটা জিজ্ঞাসা করব , ‘তাহলে কেন
ওকে ফোন করে ও কেমন আছে জানতে চেয়েছিলেন ?”
“হ্যাঁ , এই কথাটা বলবি যে একজনের মনে আশা জাগিয়ে এভাবে ফোন করা মানে তাকে
অপমান করা । উনি তো আরও অনেক পাত্রীকে দেখতে যাবেন বলে দিস এরকম ব্যাবহার তাদের
সঙ্গে যেন না করেন”, এবার শিরিনের গলায় রাগ ঝরে পড়ল ।
“তা
আর বলতে ! একেবারে তুলোধূনো করে ছাড়ব ব্যাটাকে ! আমার বন্ধুর মনে কষ্ট দেওয়া” !! হাসাতে
চাইলাম ওকে । সফল হলাম । একেবারে হা হা করে হেসে উঠল , “ হ্যাঁ , বাছাধন জানেনা তো
যে কার পাল্লায় পড়েছে !” এবার আমিও বেশ মন
খুলে হাসলাম । শিরিণের মুখে হাসি আনতে পেরেছি এটা আমাকে খুব আনন্দ দিল ।
আমার মনে এখন একটা কথা বারবার উঁকি দিচ্ছে , শিরিণকে এই ব্যাপারটার মধ্যে
টেনে এনে ভুল করলাম না তো ? বেশ তো ছিল একা একা , নিজের জীবনটাকে মোটামুটি
পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে সময় কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছিল । আমি আবার ওকে স্বপ্ন
দেখালাম , ওর চোখে আশার কাজল পরালাম , এই স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবেনা তো ? এই কাজল চোখের
জলে মুছে জাবেনা তো ? হে ভগবান ! তা যেন
না হয় । আমি আর তাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবনা কোনদিন ।
সেই দিনটা আজও মনে আছে । সকালে শিরিণের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল , ও বলল
আগের দিন রাত্রে হঠাৎ প্রচণ্ড মাথা ঘোরা শুরু হয়েছিল, বিছানা থেকে কিছুতেই উঠতে
পারছিলনা অথচ বাথরুমে যেতেই হবে । কোনরকমে দেয়াল ধরে ধরে বাথরুমে যায় তারপর অনেকক্ষন
শাওয়ার চালিয়ে তার নিচে দাঁড়িয়েছিল । একটু ঠিক লাগার পর ওই ভেজা জামাকাপড় পরা
অবস্থাতেই বিছানায় এসে শুয়ে পরে । ওঠার শক্তিটুকু পর্যন্ত্য ছিলনা । ভোরে উঠে
কোনরকমে একটা অ্যানটাসিড খেয়ে আবার শুয়েছে । অত রাতে কাউকে ডাকতেও সাহস পাচ্ছিল না
।
এই কথাটা শোনার পর থেকেই আমার মনে
একটা অস্বস্তি হতে শুরু করেছিল । সারাদিন শুধু ওর কথা ভেবেছি, আহারে ! একটা মেয়ে
কি অসহায় হয়ে জীবন কাটাচ্ছে ! মা নেই, বাবা নেই,ভাই বোন কেউ নেই ! শুধু কোচিং
সেন্টারে আর ঘরে ছাত্র পড়িয়ে নিজের সংসার নিজে চালাচ্ছে । বাবা সেন্ট্রাল
গভর্নমেন্ট অফিসে কাজ করতেন বলে অবিবাহিত
মেয়ে হিসেবে বাবার পেনশনটা পায় ও । এটা একটা বিরাট সিকিউরিটি , অন্ততঃ বাড়িভাড়া ,
ইলেক্ট্রিসিটির বিল ,মাসের চাল ডাল এগুলো তো হয়ে যায় , টুইশনি তো কোন ঠিক নেই কোন
মাসে কম কোন মাসে বেশী ।
এরকম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে দেখবে কে ওকে ? নিজেকে ওর জায়গায় রেখে দেখতে
গিয়ে শিউরে উঠলাম । ভীষণ একটা কষ্ট হচ্ছিল । মনে হল ওর যদি একটা বিয়ে দিতে পারতাম
খুব ভাল হত , কিন্তু ও কি রাজী হবে ? ৫০ পেরিয়ে গেছে, এই বয়সে আমার বলাটাই কি উচিত
হবে ? পাত্রই বা কোথা থেকে যোগাড় করব ? এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়ে গেল
সন্তুদার কথা ।
আরে হ্যাঁ , সন্তুদাই তো এখনও বিয়ে করেনি , আমরা আগে খুব
পেছনে লেগে থাকতাম বিয়ে করো বিয়ে করো বলে,
তারপর ছেড়ে দিয়েছি , সন্তুদা আমাদের থেকে ৩/৪ বছরের
বড় । আমার মাসতুতো বোন টিনার দ্যাওর । টিনার বিয়ে আমাদের পাড়াতেই হয়েছিল ।
সন্তুদাকে আমরা ছোটবেলা থেকেই চিনি । অবস্থা বেশ ভালো , পার্ক স্ট্রীটে নিজের
ওষুধের দোকান আছে । যাদবপুরে নিজেদের ফ্ল্যাট , সঙ্গে শুধু ওর মা মানে রুনুপিসি
থাকে ।
এই তো বেশ ভাল জুটি হবে মনে হচ্ছে । কিন্তু তার
আগে শিরিণকে রাজী করাতে হবে । তাই ফোন করলাম ।